Monday, October 6, 2025

ইসরায়েলি রাষ্ট্র গঠনে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিচারিতা

 march to Gaza-র প্রধান আয়োজক কারা? যে শতশত মানুষ অংশ নিয়েছে তারা কারা? 

march to Gaza-র কর্ডিনেট করছে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠক Waves of Freedom। প্রধান আয়োজক হিসেবে যে ১৩জনের নাম পেলাম ওয়েবসাইটে তার মধ্যে মাত্র তিনজন মুসলমান, তাও হুজুর মুসলমান না, অ্যাক্টিভিস্ট মুসলমান। আর এই মার্চে যে শতশত মানুষ অংশ নিয়েছে তারা প্রধানত অ্যাক্টিভিস্ট। এই অ্যাক্টিভিস্ট কারা? বিভিন্ন ধর্মের। এমনকি ইহুদিও আছে। একটা বড়ো অংশ কিন্তু নাস্তিকও। এদের অধিকাংশ ইউরোপীয়। হয়তো তাদের কারো কারো দেশ অফিসিয়ালি এই গণহত্যায় ইস*রাইলের পক্ষ নিয়েছে। যেমন দুর্দান্ত সমর্থন যোগাচ্ছে যে ইতালিরা, সেই ইতালি রাষ্ট্র হিসেবে কিন্তু ইস*রাইলের পক্ষে। কিন্তু জনগণ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে গিয়ে গণহত্যার শিকার ফিলি*স্তিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এরা মুসলমান না। হয়তো খ্রিস্টার্ন, হয়তো অবিশ্বাসী। গা*জা থেকে ইতালি জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখক Eman Abu Zayed আল জাজিরায় একটি কলাম লিখেছেন। তাঁর কলাপের শিরোনাম: The Italian people made us smile in Gaza। কলামের একটি জায়গায় লিখেছেন: This was not a Muslim or Arab-majority nation. It was a Western country, whose government refuses to recognise a Palestinian state and continues to support Israel. And yet, the Italian people walked out for us, to express their solidarity with us.


কায়রোতে সমর্থন যোগাতে ৫০টি দেশ থেকে হাজার হাজার অ্যাক্টিভিস্ট একত্রিত হয়েছেন। এরাও প্রধানত ইউরোপীয়। এশিয়ান, আফ্রিকান ও আমেরিকানরাও আছে। এমনটি ই*সরাইলের মানুষও আছে। বার্লিনের দশ হাজারের বেশি মানুষ জড় হয়েছে সমর্থন যোগাতে। নৌপথে মার্চকারীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ পথে নেমেছে স্পেনে, লন্ডনে, ফ্রান্সে, ইতালিতে, কলোম্বিয়ায়, ভেনেজুয়েলা, বার্লিন, হেগ, তিউনিস, ব্রাসিলিয়া, ব্রাসেলস, অ্যাথেন্স, জেনেভা এবং বুয়েনস এইরেসসহ পৃথিবীর অসংখ্য শহরে। সৌদিতে কি হয়েছে? সম্প্রতি গা*জায় গণ*হত্যা বন্ধের জোর দাবি জানিয়ে সিডনি ব্রিজজুড়ে এক লাখের বেশি মানুষ পথে নেমেছিল। আরব দেশগুলোর কোনটাতে এতো মানুষ পথে নেমেছে গা*জার জন্য?? ঢাকাসহ মুসলিম দেশে যারা পথে নেমেছে তারা কি ভুক্তভোগী মুসলমানদের জন্য নেমেছে নাকি ভুক্তভোগী মানুষের জন্য নেমেছে?   


এই যে ননমুসলিম দেশগুলোর মানুষ পথে নামছে গা*জার মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য তাদের ধর্মীয় পরিচয় কি ভেবেছেন আপনি? মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, সেই অর্থে তাদের ধর্মীয় পরিচয় না-ভাবাই উত্তম। আমি প্রশ্নটি উত্থাপন করছি এই কারণেই যে, এই মানুষগুলোকে আপনি কতটা আপন ভাবেন? তারা বিপদে পড়লে প্রার্থনা করেন নাকি আল্লাহর গজব বলে উল্লাস প্রকাশ করেন? 


গা*জার পক্ষে থাকার জন্য যে অ্যাক্টিভিস্টদের জন্য আপনি প্রার্থনা করেছন, তারাই যখন নারী অধিকারের কথা বলে, থার্ড জেন্ডার রাইটস নিয়ে কাজ করে তখন আপনিই হয়তো তাদের গালি দেন, হত্যার হুমকি দেন। মনে রাখবেন, এই মানুষগুলো যেমন গা*জা মুক্ত করার আন্দোলন করছেন, তেমনি তারা যে কোনো মানবিক সংকটে আন্দোলন করেন। ধর্ম-জাতীয়তার উর্ধে তারা মানুষের কথা বলেন। মার্চের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ সুইডিশ অ্যাক্টিভিস্ট Greta Thunberg-সহ এদের সিংহভাগই এলজিবিটিকিউ-দের অধিকার নিয়েও সরব। বাংলাদেশ থেকে march to Gaza-তে যিনি অংশ নিয়েছেন, শহিদুল আলম, তিনিও কোনো হুজুর না, অ্যাক্টিভিস্ট। তার সম্পর্কে নেটে লেখা হয়েছে: Shahidul Alam's work includes documenting the plight of marginalized groups, such as young gay men and sex workers in Bangladesh, through his photography and the Elton John Foundation, which aligns with LGBTQ+ rights. ফলে আজ যে শহিদুল আলমকে আমরা চিয়ার্স করছি তিনি “কঠোর মুসলমান” শহিদুল আলম না, মানবতাবাদী শহিদুল আলম। 


মার্চে অংশ নিয়ে ইস*রায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে বার্সেলোনার সাবেক মেয়র আডা কোলাউ ও নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ম্যান্ডলা ম্যান্ডেলা। বার্সেলোনার এক মা মিরিয়াম ম্যাকন্যালি জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে আছে ওই নৌবহরে। তিনি বলেন, ‘আমি আমার মেয়ের জন্য ভীষণ চিন্তিত, তবে আমি গর্বিতও। সে মানবতার পক্ষেই দাঁড়িয়েছে।’ 


তাই বলছি, শুধু ধর্মীয় কারণে যারা ফিলি*স্তিনি মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে বা দাঁড়াবে তাদের চেয়ে মানুষ হিসেবে এই অ্যাক্টিভিস্টরা ফার বেটার। একজন ইহুদি যদি এখন ফিলি*স্তিনের পক্ষে দাঁড়ায়, একজন আমেরিকান বা হিন্দু-খ্রিস্টান অথবা নাস্তিক যদি দাঁড়ায় সে মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। ধরে নিতে পারি, পৃথিবীর কোনো প্রান্তে বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য তার মন কাঁদে। কিন্তু যে শুধু ধর্মীয় কারণে দাঁড়াবে, তার অন্তর একচোখা। সব মানুষের জন্য তার প্রাণ কাঁদে না। গা*জামুখী মার্চে এই যে সমকামিরাও গেছে, এই যে নারীরা গেছে হাফপ্যান্ট পরে, ওরা জানে হামাসের ফিলি*স্তিনে স্বাভাবিক পরিস্থিতে ওরা হয়তো সেখানে welcomed হবে না। ওদের অ্যাকসেপ্ট করবে 

না ফিলি*স্তিনের কট্টরপন্থী মুসলমানরা। সেটা জেনেও তারা এই মুহূর্তে বিপদগ্রস্ত ফিলি*স্তিনি মানুষে পাশে ছুটে যাচ্ছে মৃত্যু হতে পারে জেনেও। ফিলি*স্তিনি মানুষও এই মুহূর্তে ভাবছে না, কারা যাচ্ছে তাদের সহযোগিতা করতে। তারা বিশ্বাস করছে যারা যাচ্ছে তারা মানুষ হিসেবে উত্তীর্ণ, উন্নত, তারা এই মুহূর্তে ওদের কাছে আল্লাহর দূত। ভিডিওতে দেখলাম, একটা নৌকা গা*জা উপকূলে ভেড়া মাত্রই (সম্ভবত আগের) নারী শিশু বৃদ্ধ সকল ফিলি*স্তিনি উল্লাস করে ছুটে আসছে তাদের স্বাগত জানাতে। সেই মুহূর্তে যাদের স্বাগত জানাচ্ছে তাদের ধর্মীয় পরিচয় নেই, যারা স্বাগত জানাচ্ছে তাদেরও ধর্মীয় পরিচয় প্রধান না। মানুষ মানুষের পাশে ছুটে যাচ্ছে। মানুষ সেই মানুষকে ভালোবেসে অভিবাদন জানাচ্ছে। আনন্দে কেঁদে ফেলছে দুই মানুষই।  


এত কথা বলার একটাই কারণ, মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধর্মীয় লেন্স লাগে না। যদি আপনার সেটা লাগে তাহলে জানবেন আপনি মানুষ হিসেবে গৌন, ঊন। কিন্তু যারা ধর্ম-জাতীয়তার ঊর্ধে উঠে মানুষের পাশে দাঁড়ায় তারা মানুষ হিসেবে উন্নত, শ্রেষ্ঠ। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যারা মানুষ হিসেবে ঊন, গৌন তারা যে যার ধর্মীয় ঈশ্বরের কাছেও ঊন, গৌন।   


উন্নত মানুষের জয় হোক। মুক্ত হোক প্যালে*স্টাইন ও প্যালে*স্টাইনের মানুষ।

- মোজাফ্ফর হোসেন 

No comments:

Post a Comment

ইসরায়েলি রাষ্ট্র গঠনে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিচারিতা

 march to Gaza-র প্রধান আয়োজক কারা? যে শতশত মানুষ অংশ নিয়েছে তারা কারা?  march to Gaza-র কর্ডিনেট করছে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠ...